পাবনার আমিনপুরে স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গর্ভবতী স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এতে তার গর্ভের সন্তানও মারা গেছে। এঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই নানা চাপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগীরা।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে আমিনপুরের সাগরকান্দি ইউনিয়নের চর কেষ্টপুরে এঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন- চর কেষ্টপুরের মাজেদ প্রামানিকের ছেলে সেলিম প্রামাণিক (২৩), একই এলাকার মো. শরীফ (২৪), আনিছ সরদারের ছেলে রাজীব সরদার (২১), তালেব মন্ডলের ছেলে রুহুল মন্ডল (২৬), শফিক সরদারের ছেলে লালন সরদার (২০) ও মো. শামসুলের ছেলে সিরাজুল (২৩)।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চর কেষ্টপুরের কাদেরিয়া তরিক্বাপন্থিদের একটি ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। টাকার প্রয়োজনে ওই রাতে তার স্বামীর কাছে যান তিনি। সেখানে ওয়াজ শুনে রাত ১২টার দিকে পাশের তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে গতিরোধ করেন অভিযুক্ত ৬ যুবক। তাদের নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদের করা হয়। এক পর্যায়ে নারীর স্বামীকে অস্ত্র ও ব্লেডের মাধ্যমে জিম্মি করে এবং ওই নারীকে ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্তদের দুইজন পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই নারীর স্বামী তাদের কাছ থেকে ছুটে এসে স্থানীয়দের লোকজনকে বললে তারা দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তদের একজনকে আটক করে গণধোলাই দেন এবং বাকিরা পালিয়ে যান। এসময় ধর্ষিত নারীকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় লিটন মন্ডল, রাজ্জাক মন্ডল, নিফাস মন্ডল ও শহিদ মন্ডল বলেন, ‘আমাদের ওয়াজ মাহফিল চলা অবস্থায় রাত ১টার দিকে ওই ছেলে ছুটে এসে বলল- কিছু ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দেন। আর মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরীর কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ’
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমরা আমাদের আত্মীয় বাড়িতে যাওয়া পথে তারা মাঠের মধ্যে পথ আটকায়। আমাদের বলে তোরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। আমরা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী দাবি করলেও তারা কর্ণপাত করেননি। ফোনে আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেও ওরা শোনেনি। এক পর্যায়ে আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে এবং অস্ত্র আর ব্লেডের মুখে আমার স্বামীকে জিম্মি করে আমাকে মাঠের মধ্যে ভু্ট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ শুরু করে। এসময় আমার স্বামী ছুটে গিয়ে পাশের লোকজন ডেকে আনলে একজনকে আটক করা হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।’
ভুক্তভোগীর নারীর স্বামী মামলার বাদী বলেন, ‘আমার স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। গর্ভের সন্তান মারা গেছে। মামলা হলেও আমাদের এখনো কোনো কাগজপত্র দেয়া হয়নি। থানায় গেলে কিছু পুলিশ সদস্য নানান কথা বলেন। আর যারা ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ থেকেও নানা হুমকি ও চাপ আসছে। বলছে এঘটনায় কিছুই হবে না, তোমাদেরই বিপদ হবে তাই মীমাংসা করো। আমরা ধর্ষণ এবং আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই।’
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরী বলেন, ‘স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। পরে তাদেরকে বলি মেয়েটাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’
অভিযুক্তরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরছেন কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। এটা নিয়ে প্রশাসনের তেমন তোরজোড় আছে বলে তেমনটা মনে হচ্ছে না। আমরা এরকম একটা নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’
তবে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। তার দাবি- ‘অভিযুক্তরা সবাই পলাতক আছেন। তাদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশি গাফিলতার বিষয়টি মিথা। আমরা চেষ্টা করছি গ্রেফতারের। ধর্ষণের ঘটনা মিমাংসা হয় না, বাদীকে হুমকি-ধামকির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’