‌আ.লীগ নেতার চাপে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রমের উৎসব হবে আহবায়ক কমিটির অধীনে


পাবনা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মামুনের চাপে অবশেষে আহবায়ক কমিটির অধীনেই হবে পাবনার হিমাইতপুরে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে এবারের মহোৎসব। শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের লাইব্রেরী কক্ষে অনুষ্ঠিত আইন শৃঙ্খলাশীর্ষক সভায় হট্টগোলের মধ্য দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পাবনা সদর আসনের এমপি নির্দেশিত আহবায়ক কমিটির আহবায়ক, ২০২৩-২৮ মেয়াদী কমিটির সভাপতি গোপীনাথ কুন্ডুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সভায় সাধারণ সম্পাদক তাপস বর্মণ, সহ-সভাপতি যুগল কিশোর ঘোষ, সদস্য ড. নরেশ মধু, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান মামুন, পৌর কাউন্সিলর রুবেল, কাউন্সিলর শাহীনসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র বর্মণ পূর্ববর্তী কমিটির অধীনেই মহোৎসব হবে এমন দাবি উত্থাপনের সাথে সাথে আওয়ামীলীগ নেতা শাহাজাহান মামুন, পৌর কাউন্সিলর শাহীন ও রাজিব কমিশনারসহ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ হট্টগোল শুরু করেন। মারমুখী পরিস্থিতিতে আশ্রমের নেতাকর্মি ও অনুসারী ভক্তদের বাধ্য করা হয় এমপি নির্দেশিত আহবায়ক কমিটি মেনে নেয়ার জন্য। একইসাথে আশ্রমের আসন্ন তিনদিনের উৎসব ওই কমিটির অধীনে অনুষ্ঠিত হবে বলে চাপিয়ে দেয়া হয়।

আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান মামুন বলেন, এমপিকে অসম্মানিত হতে দেবো না আমরা। তার নির্দেশনায় আশ্রমের জন্য যে আহবাক কমিটি করা হয়েছে ওই কমিটির অধীনেই উৎসব করতে হবে।

আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব তাপস বর্মণ বলেন, জীবনের ভয় কার নেই বলেন? এমপি মহোদয় আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন এখন এটাই মেনে নিতে হবে!

তথ্যানুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশ্রম ঘিরে আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও কমিটিতে যাওয়া নিয়েই মূলত দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৭ জুন এক সভায় সৎসঙ্গের ২০২৩-২০২৮ (৫ বছর মেয়াদী) একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই সভায় আশ্রমের জেষ্ঠ সেবাইতগণ, সারাদেশের শিষ্য প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের উপস্থিতে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। এছাড়া ২৯ সদস্য বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ঋত্বিক পরিষদ ও ৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রিয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠনের পর প্রয়াত সাবেক সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার অনুসারী একটি পক্ষ ওই কমিটি না মেনে বিরোধিতা শুরু করেন। যার বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে ভক্তদের মাঝে। বর্তমান কমিটির বিরোধিকারী পক্ষটি অবশেষে দ্বারস্থ হন পাবনা-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের কাছে।

পরে গত ১১ মার্চ দুপুরে আশ্রমে লাইব্রেরী কক্ষে উভয় পক্ষকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি। সেখানে তিনি বলেন, যেহেতু ঠাকুর সবার। ঠাকুরের আশ্রমও সবার। তাই সব ভুলে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। ওইদিন দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করে উৎসব পালনের আহবান জানান এমপি প্রিন্স। তার পরামর্শে গোপীনাথ কুন্ডুকে আহবায়ক ও তাপস চন্দ্র বর্মনকে সদস্য সচিব করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

তবে, সৎসঙ্গের সংবিধান অনুযায়ী নির্দেশিত আহবায়ক কমিটি মান্য করা সম্ভব নয় বলে পরদিন ১২ মার্চ একটি চিঠির মাধ্যমে সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সকে জানিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র বর্মণ।

আশ্রম সংশ্লিষ্টরা বলেন, এমপি মহোদয় ওই চিঠি পেয়ে আশ্রমের সভাপতি গোপীনাথ কুন্ডু ও সহ-সভাপতি যুগোল কিশোরকে ডেকে নিয়ে তার নির্দেশনায় আহবায়ক কমিটি মেনে নিয়ে কাজ করতে বলেন। পরে ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা বলেন। শনিবারের আইন শৃঙ্খলা সভায় মহোৎসব শান্তিপূর্ন করতে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়। সেখানে উঠে আসে এমপির নির্দেশনায় আহবায়ক কমিটি গঠন ও তা না মানার বিষয়টি।

সভায় এমপির নির্দেশনা না মানায় ক্ষুব্ধ হন আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান মামুন ও পাবনা পৌরসভার কাউন্সিলর শাহীন। শুরু হয় হট্টগোল। এক পর্যায়ে শাহজাহান মামুনের চাপে আহবায়ক কমিটির নেতৃত্বেই এবারের মহোৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেয় আশ্রম কর্তৃপক্ষ।

আশ্রম সংশ্লিষ্টরা বলেন, আশ্রমের কমিটি গঠন করা হয় সাংবিধানিক নিয়মে শীষ্য পরিষদ ও জেলার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সভা করে। হুট করেই এ কমিটি বিলুপ্ত করা বা ভেঙে দেয়া যায় না। যে কারণে আহবায়ক কমিটি নিয়ে ঠাকুর অনুসারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার ক্ষমতাধরদের এমন আচরণে যুগের পর যুগ ধরে উদযাপিত হওয়া আসন্ন এবারের দোল উৎসব নিয়ে ঠাকুর ভক্তদের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে।