পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিল রুহল নামে একটি জলমহল বৈধভাবে পাওয়া ইজারাদারদের সরকারিভাবে দখল বুঝিয়া পরপরই অবৈধভাবে বিলটি দখলের পাঁয়তারা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার বিল রুহুল জলমহলটি চলতি বছরের নতুন ইজাদার প্রতিষ্ঠান মধুরগাতি পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে বুঝিয়ে দেন ভাঙ্গুড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমীয়া আক্তার রোজী। এসময় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হোনটি তাসমীয়া আক্তার রোজী। তবে ইজারা পাওয়া মৎস্যজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আপনাদের সরেজমিন বুঝিয়ে দিলে গেলাম। এখন থেকে এই বিলের দায়িত্ব আপনাদের। বিলের অবৈধভাবে বসানো জালসহ অন্যান জিনিসপত্র আপনার মতো করে সরিয়ে ফেলতে পারবেন। বিলে অবৈধভাবে অন্য কেউ দখলে নিতেই চাইলে আপনারা অভিযোগ দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানা গেছে, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ৭৯.৯৬ একরের বিল রুহুলের বদ্ধ জলমহল ১৪৩১-১৪৩৬ বাংলা সনের হিসেবে আগামী ৬ বছরের জন্য ইজারা পায় মধুরগাতি পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মৎস্যজীবীরা। কিন্তু তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে যান আগের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ পাটুলীপাড়া গ্রাম্য মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মৎস্যজীবীরা। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জলমহলের ইজারা মূল্য ও ভ্যাট পরিশোধ করেন মৎস্যজীবীরা। এরপর গত পহেলা বৈশাখের মধ্যে জলমহলটি বৈধভাবে প্রাপ্তদের মাঝে লিখিতভাবে দখলনামা দিয়ে জলমহলটি বুঝিয়ে দেন ভাঙ্গুড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি)। কিন্তু সরেজমিন জলমহলটি দখলে নিতে বাধা প্রাপ্ত হন ইজারাদাররা। তাদের নানান হুমকি-ধামকি দেন আগের ইজারাদাররা। এরপর আজকে সরেজমিন গিয়ে নতুন ইজাদারদের জলমহলটি বুঝিয়ে দেন ভাঙ্গুড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমীয়া আক্তার রোজী। তিনি বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার আগের ইজারাদাররা আবারও বিলটি দখলে নিতে নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
মধুরগাতি পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা বৈধভাবে সরকারিভাবে ইজারা নিয়েছি। কিন্তু আগের বছরের ইজারা পাওয়া দক্ষিণ পাটুলীপাড়া গ্রাম্য মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লোকজন কোনো ভাবেই দখল ছাড়ছিল না, তারা শতশত অবৈধ চায়না দুয়ারি জাল ফেলে দখল করে রেখেছিল। আমরা ডিসি ও ইউএনও মহোদয়ের কাছে অভিযোগ করলে ভাঙ্গুড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজকে (১৮ এপ্রলি) আমাদের সরেজমিন বিলটি বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আগের ইজারাদারা বিলটি আবারও অবৈধভাবে দখলের পাঁয়তারা করছে। তারা নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে।’
এব্যাপারী অভিযুক্ত দক্ষিণ পাটুলীপাড়া গ্রাম্য মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, মাছ ধরেই খাই, তারা ধনী মানুষ। আমরা তাদের বলেছি- তোমরা ইজারা পেয়েছো ভালো কথা কিন্তু আমাদের কাছে বিক্রি করে দেও কিন্তু তারা আমাদের কাছে বিক্রি করছে না। আমরা উপযুক্ত দাম দিয়েই কিনতে চাইছি। তারা বিভিন্ন বিল ডাকে আর পরে বিক্রি করে দেয়, তাহলে আমাদের কাছে বিক্রি করলে সমস্যা কোথায়?’
এবিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ‘বিষয়টি পুরোপুরি জানি না, কিন্তু শুনেছি। আজকে নাকি ভাঙ্গুড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) গিয়ে নতুন ইজারাদারতে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আগের পক্ষ নাকি ইয়ে... করতেছে। তবে হুমকি-ধামকির বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’