পাবনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বহুল আলোচিত সমালোচিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরান মাহমুদ তুহিনকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অবৈধ বালু মহল ও অবৈধ সিরাপ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে অনৈতিক সুবিধা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। বদলি ঠেকাতে ঢাকায় গিয়ে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-২ শাখা থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে নৌপুলিশে বদলি করা হয়েছে। তার স্থলে পাবনার ডিবি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে এখনও কাউকে পদায়ন করা হয়নি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে পাবনা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ডিবি পুলিশের ওসি হোন। পাবনায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে বেশ সখ্যতা গড়ে তোলেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের সুযোগে তিনি বালু মহল, অবৈধ সিরাপ কারখানাসহ বিভিন্ন মহলে নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেক শিক্ষার্থীকে তুলে এনে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন আন্দোলনের সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ব্যাপক টর্চার চালিয়েছিলেন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে তিনি এখন বিএনপির ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাকে বদলি করা হলে বদলি ঠেকিয়ে সাম্রাজ্য ধরে রাখতে ঢাকায় জোর লবিং করছেন। ইতোপূর্বে তিনি বগুড়া ও জয়পুরহাটে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল সেই অভিযোগে তিনি লঘু শাস্তি প্রাপ্ত।
আন্দোলনে অংশ নেয়া ঈশ্বরদীস্থ কৃষি কলেজের শিক্ষার্থী ইয়াছিন আরাফাত বলেন, টার্মিনাল থেকে আমাদের ৭-৮ জন শিক্ষার্থীদের আটক করে ডিবি পুলিশ এবং শারীরিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছিল। আমাদের সবার মোবাইল কেড়ে নিয়েছিল যা এখনও ফেরত দেয়নি। আমাদের ব্যাপক মারধর করে পায়ের গিড়ে ভেঙে ফেলেছিল। এক্সে করা লাগছিল। আমরা এর বিচার চাই।
পাবনার মেরিল বাইপাস এলাকার আইটিটি শিক্ষার্থী কাজি তাওফিক বলেন, আমাকে ৩১ জুলাই মেস থেকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করে। আমি ৭দিন জেল খেটেছি। উনি যদি এরকম আরও হয়রানি করে থাকে তাহলে তার উপযুক্ত শাস্তি হোক।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, আমাকে নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আমি কাউকে হয়রানি করেনি। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই না করেই একজনের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমি কোন পারপাসে কি করছি আমার হাই অথরিটি জানে।
এবিষয়ে পাবনা পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান বলেন, আমাদের কাছে এই ধরনের লিখিত অভিযোগ আসেনি। তাকে বদলি করা হয়েছিল। লবিংয়ের বিষয়টি যে কেউই করতে পারেন কিন্তু সেটা সফল হয় কিনা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।